সুনাগরিক তৈরি ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে গ্রন্থাগারের ভূমিকা

              হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন এই বাংলাকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। যেমন উঁনি বলেছেন “আমাদেরকে সোনার দেশের সোনার মানুষ হতে হবে।” 

এখন প্রশ্ন হলো সোনার বাংলা বলতে উনি কী বুঝাতেন? সোনার বাংলা মানে কি সোনা দিয়ে সব কিছু আচ্ছাদিত করা অর্থাৎ সবকিছু স্বর্ণ-খচিত করা? নাকি উঁনি রূপক অর্থে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন? ‘সোনার বাংলা’ শব্দটি একটি রূপক অর্থজ্ঞাপক শব্দ যা ইতিবাচক অর্থে (উৎকৃষ্ট বা অত্যন্ত ভালো/সোনার মতো মূল্যবান) ব্যবহার করা হয়েছে। স্বর্ণ বা সোনা যেমন আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান বস্তু তেমনি এই বাংলাও (বাংলাদেশ) আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যা আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি। তাছাড়া, সৃষ্টিকর্তা সুজলা-সুফলা, শস্যে-শ্যমলা আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিকে এতটাই মনোমুগ্ধকর রূপে তৈরি করেছেন যা আমাদের চক্ষু শীতল করে দেয়, প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা সবসময় সৌন্দর্য্যের অপরূপ এই লীলভূমিকে একটি স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি চেয়েছিলেন এই অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো  বিশ্বসভায় স্বাধীনভাবে বীরদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, নিজেদের অধিকার নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। শিক্ষায়-দীক্ষায়, আচার-আচরণে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, অর্থনীতি-রাজনীতিতে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে সর্বোপরি একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করে তুলবে। কিন্তু দূর্ভাগ্য, জাতির পিতার আজন্ম-লালিত সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন তিঁনি দেখে যেতে পারেননি। তবে আশার কথা হলো উঁনার সুযোগ্য কণ্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দৃঢ়তায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ বাস্তবের মুখ দেখতে শুরু করেছে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবন-যাত্রার মান্নোনয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, কৃষিতে অগ্রগতিসহ জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে । ফলস্বরূপ বাংলাদেশ এখন নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উত্তরণ হয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা। আর এর পূর্বশর্ত হচ্ছে যার যার জায়গা থেকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সকল অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। অন্যভাবে বললে যাকে বলে সচেতন, দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমী, ন্যায়পরায়ণ সর্বোপরি মনুষ্যত্ব ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্ভাসিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা। আর যার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুশিক্ষার। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন হবে সুশিক্ষা কী বা তার স্বরূপ কী? আমি এককথায় এভাবে বলতে চাই- যে শিক্ষা মানুষের মানবিক বোধকে জাগ্রত করে নিজেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে তাই সুশিক্ষা। যে শিক্ষা পশুত্ব ও মনুষ্যত্বের মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করে তাই সুশিক্ষা।

 একমাত্র সুশিক্ষিত মানুষই পারে একটি সুন্দর সমাজ, সভ্য জাতি ও উন্নত দেশ উপহার দিতে। আর সুশিক্ষিত হতে হলে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয়। সুশিক্ষার স্বরূপ উদঘাটন করতে গিয়ে যেমনটি বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী মহাশয় বলে গিয়েছেন-“সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।” আর স্বশিক্ষিত হওয়ার পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারে এসে মানুষ স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে তার বিবেকবোধ জাগ্রত করে যা তাকে একজন সচেতন, দায়িত্বশীল, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এভাবেই জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন (সোনার বাংলা) বাস্তবে রূপ দিতে এরকম সুনাগরিক তৈরি করা সময়ের এক অমোঘ দাবি। তবেই সার্থক হবে জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং আমরা হবো সোনার বাংলার যোগ্য উত্তরসূরি।

লেখক : সাজ্জাদুল করিম, লাইব্রেরিয়ান, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার শেরপুর ; ই-মেইল: sazzad.karim70@gmail.com


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের উন্নয়নে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা

পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক