পোস্টগুলি

বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি

  এই তো কয়েকদিন আগেই সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৪। সারা দেশের মানুষকে বই পড়া, জ্ঞানচর্চা ও গ্রন্থাগার ব‌্যবহারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে একটি জ্ঞানমনস্ক আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘খ’ ক‌্যাটাগরির দিবস হিসেবে ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখটিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে ঘোষনা করে। যার প্রেক্ষাপট হলো- ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সরকারি উদ‌্যোগে প্রথম কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল, যা বর্তমানে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রলালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে সারা দেশে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। সপ্তম বারের মত উদযাপিত হওয়া এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ‌্য ছিল “গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি”। খুবই সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক প্রতিপাদ‌্য। যদিও প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, গ্রন্থাগারে বই পড়ার সাথে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কী সম্পর্ক রয়েছে? কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই এ

স্মার্ট বাংলাদেশ, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও লাইব্রেরি

  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সর্বদা সোনার মানুষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন- যা তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা-ভাষণ ও লেখনি থেকে জানা যায়। যেমন তিঁনি বলতেন “ সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষের দরকার। তাহলেই সোনার বাংলা গড়তে পারব। ” সোনার মানুষ বলতে তিঁনি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, নীতিবান, আদর্শ মানুষের কথা বলতেন যারা সকল অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে বাংলার দু:খী মানুষের জন্য কাজ করবে। আর এই সোনার মানুষ গড়তে প্রথমেই যেটি দরকার তা হলো ‘সুশিক্ষা’। যে শিক্ষা মানুষের মানবিক বোধকে জাগ্রত করে নিজেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে তাই সুশিক্ষা। একমাত্র সুশিক্ষিত মানুষই পারে একটি সুন্দর সমাজ, সভ্য জাতি ও উন্নত দেশ উপহার দিতে। আর সুশিক্ষা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিখ্যাত প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন- “আমার বিশ্বাস, শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।”   বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলার; আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। স্মার্ট

লাইব্রেরির ভবিষ্যৎ ও ভবিষ্যতের লাইব্রেরি

  লাইব্রেরিতে এখন আর কেউ যায় না। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে বই পড়ার সময় কোথায়। গুগল করলেই যখন সব কিছু হাতের মুঠোয় পাওয়া যায় তখন কে আর কষ্ট করে লাইব্রেরিতে যায়? তাই বই পড়া একটা অপ্রয়োজনীয় কাজ আর লাইব্রেরি তো এখন পুরোপুরিই অপ্রাসঙ্গিক। এরকম কথা এখন আমরা হর-হামেশাই শুনে থাকি। তাহলে সত্যিই কি লাইব্রেরি তার উপযোগিতা হারিয়েছে? ভবিষ্যতে লাইব্রেরি কি বিলীন হয়ে যাবে? এই কথার উত্তর আসলে এক কথায় দেয়াটা মুশকিল। তাই এই লেখার সূত্রপাত। আচ্ছা, লাইব্রেরি বলতে আসলে কি বুঝায়? কবে থেকে এবং কেন এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হলো বা এর প্রয়োজনীয়তাই কেন উপলব্ধি হলো? সত্যি বলতে কি, লাইব্রেরির ইতিহাস অতি প্রাচীন। সভ‌্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মূলত যার সূচনা। নৃ-বিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী আদিম গুহাবাসী মানুষ যখন থেকে তাদের মনের ভাব, চিন্তা-কল্পনা গুহার দেয়ালে, পাথরে, মাটিতে, চিত্র ছবি বা সংকেত আকারে লিখে রাখতে প্রয়াসী হয় তখন থেকেই মূলত লাইব্রেরির যাত্রা। তার কারণ মানুষ তার লব্ধ ও সংগৃহীত জ্ঞান স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে রাখার তাগিদ থেকেই মূলত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে। আর মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অভিজ্ঞতা-জ্ঞান ইত‌্যাদি লিপিবদ্

পাঠ বিমুখতা ও আমাদের দায়

সম্প্রতি বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম হলো – ‘পাবলিক লাইব্রেরি : বিমুখ পাঠক ফেরাতে কী করছে কর্তৃপক্ষ?’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা অনেক কমেছে। এরকম খবর বা প্রতিবেদন মাঝে মাঝেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। এসকল প্রতিবেদনগুলোতে পাঠক কমে যাওয়ার নানামুখী কারণ খুঁজে বের করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে যেটিকে দেখানো হয় সেটি হলো- আমাদের পাঠাভ্যাস কমে যাওয়া। তাছাড়া প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান আধিপত্য, লাইব্রেরিগুলোর নানা রকম সীমাবদ্ধতা, অবসর সময়ের অভাব, সিলেবাস কেন্দ্রিক লেখা-পড়ার চাপ এবং সর্বোপরি ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থার আগ্রাসন উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে, আমাদের পাঠাভ্যাস কমে যাওয়া সম্পর্কে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আপনাদের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। প্রথমত: পাঠ বিমুখতার চিত্র উপস্থাপন করতে গিয়ে আমরা সাধারণত কী করি? আমরা লাইব্রেরিগুলোর করুণ চিত্র তুলে ধরে দাবি করি যে, আমাদের পাঠাভ্যাস কমে গিয়েছে। অর্থাৎ আমরা বলতে চাই যেহেতু আজকাল মানুষ লাইব্রেরিতে খুব একটা যায় না সেহেতু বুঝা যায় আমাদের পাঠাভ্যাস

পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক

ছবি
আজকাল একটা কথা আমরা হরহামেশাই শুনতে পাই যে, পাঠাভ্যাস ও পাঠক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কথাটি এক অর্থে হয়তো ঠিকই আছে কিন্তু আমি কথাটির সাথে একমত নই বা ঢালাওভাবে এই কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে আপত্তি করছি। এই আপত্তির পেছনের কারণ বা এ সম্পর্কে কিছু যুক্তি ও আমার ভাবনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার প্রয়াসেই আজকের এই লেখা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার পূর্বে পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা এখানে তুলে ধরছি।             পাঠ, পড়া বা অধ্যয়ন এটি এমন একটি কাজ যা এই মহাবিশ্বের একমাত্র সৃষ্টি হিসেবে মানুষ নামক দুপেয়ে প্রাণীটিকেই করতে হয়। অর্থাৎ এই বিশ্ব জগতের অন্য কোন সৃষ্টির বেলায় এই শব্দটির কোন অস্তিত্ব নেই। এর কারণ আমরা সবাই জানি, এই বিশ্ব-চরাচরে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি যাদের রয়েছে চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা, শেখার-জানার আকাঙ্ক্ষা। আর এই কাজটির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, স্বয়ং স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টির পর তাকে প্রয়োজনীয় সকল কিছু শিখিয়েছেন এবং এ কারণেই তাকে শ্রেষ্ঠত্বও দেয়া হয়েছে মর্মে আমাদেরকে জানিয়েছেন। তাছাড়া মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সর্বপ্রথম বাণীতেও পড়ার নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে। যা থেকে আ

লাইব্রেরি মানে বইয়ের দোকান : একটি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা

ছবি
  লাইব্রেরি শব্দটি আমাদের কাছে বহুল পরিচিত ও প্রচলিত একটি শব্দ। আমরা সবাই এই শব্দটি ব্যবহার করি কিন্তু শব্দটির সঠিক অর্থ জানি না। সত্যি বলতে কী - লাইব্রেরি বলতে কোন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝায় বা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ কী আমাদের অধিকাংশই তা জানি না। যার ফলে আমরা শব্দটির অপপ্রয়োগ করি। যেমন আমাদের সমাজে লাইব্রেরি বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বুঝানো হয় যারা বই ও স্টেশনারি মালামাল কেনা-বেচা করে। আবার লাইব্রেরি বলতে অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিসকক্ষও বুঝে থাকে। কেউ কেউ মনে করে কিছু বই একসাথে জমা করে রাখলেই সেটি লাইব্রেরি। অনেকে আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বই সংক্রান্ত যেকোন প্রতিষ্ঠানকেই লাইব্রেরি হিসেবে জানে। আসলে এর কোনটিই সঠিক নয়, এগুলো নিছক একটি ভুল ধারণা। লাইব্রেরি (Library) একটি ইংরেজী শব্দ বাংলায় যার আভিধানিক অর্থ হলো গ্রন্থাগার বা পাঠাগার। আর পরিভাষায়- যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‍জ্ঞানের বিভিন্ন উৎস তথা বই, অভিধান, বিশ্বকোষ, সংবাদপত্র, সাময়িকী, প্রতিবেদন, ছবি, ম্যাপ, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেবাগ্রহীতাদের জন্য পাঠ-সুবিধা, ধার, গবেষণা, রেফারেন্স, Indexing, Ab

মানব জীবন ও গ্রন্থাগার

ছবি
          মানুষ কাকে বলে বা মানুষের সংজ্ঞা কী? মাথা, ধর, একজোড়া হাত-পা, চোখ-কান, ইত্যাদি শারীরিক কাঠামো বিশিষ্ট প্রাণিকেই কী মানুষ বলে? নাকি মানুষের সংজ্ঞা আরোও ব্যাপক? একটি পশু বা পাখিকে পশু-পাখি হওয়ার জন্য কোন চেষ্টা করতে হয় না, জ্ঞানার্জনের জন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়না বা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছু নতুনভাবে শিখতে হয়না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- একটি বিড়াল ছানা (বা যেকোন প্রাণী) জন্মের পর থেকেই কীভাবে খেতে হবে, হাঁটতে হবে, বসতে হবে, ঘুমাতে হবে, চলতে হবে ইত্যাদি সবই জানে, কখনোই কোন ভুল করেনা বা নতুন করে তাকে আর কিছুই শিখতে হয়না। কিন্তু একজন মানুষকে মানুষ হতে হলে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়, অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু অর্জন করতে হয়। একটি কম্পিউটার যেমন কিছু হার্ডওয়্যার (মনিটর, সিপিইউ, কীবোর্ড, মাউস) ও সফটওয়্যার (অপারেটিং ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার) এর সমন্বয়ে গঠিত ঠিক একইভাবে মানুষও শরীর (হার্ডওয়্যার), আত্মা ও মন (সফটওয়্যার) এই তিনটির সমন্বয়ে সৃজিত একটি প্রাণী যাকে অনান্য সকল সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শরীর (হার্ডওয়্যার) ও আত্