পোস্টগুলি

পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক

ছবি
আজকাল একটা কথা আমরা হরহামেশাই শুনতে পাই যে, পাঠাভ্যাস ও পাঠক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কথাটি এক অর্থে হয়তো ঠিকই আছে কিন্তু আমি কথাটির সাথে একমত নই বা ঢালাওভাবে এই কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে আপত্তি করছি। এই আপত্তির পেছনের কারণ বা এ সম্পর্কে কিছু যুক্তি ও আমার ভাবনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার প্রয়াসেই আজকের এই লেখা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার পূর্বে পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা এখানে তুলে ধরছি।             পাঠ, পড়া বা অধ্যয়ন এটি এমন একটি কাজ যা এই মহাবিশ্বের একমাত্র সৃষ্টি হিসেবে মানুষ নামক দুপেয়ে প্রাণীটিকেই করতে হয়। অর্থাৎ এই বিশ্ব জগতের অন্য কোন সৃষ্টির বেলায় এই শব্দটির কোন অস্তিত্ব নেই। এর কারণ আমরা সবাই জানি, এই বিশ্ব-চরাচরে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি যাদের রয়েছে চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা, শেখার-জানার আকাঙ্ক্ষা। আর এই কাজটির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, স্বয়ং স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টির পর তাকে প্রয়োজনীয় সকল কিছু শিখিয়েছেন এবং এ কারণেই তাকে শ্রেষ্ঠত্বও দেয়া হয়েছে মর্মে আমাদেরকে জানিয়েছেন। তাছাড়া মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সর্বপ্রথম বাণীতেও পড়ার নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে। যা থেকে আ

লাইব্রেরি মানে বইয়ের দোকান : একটি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা

ছবি
  লাইব্রেরি শব্দটি আমাদের কাছে বহুল পরিচিত ও প্রচলিত একটি শব্দ। আমরা সবাই এই শব্দটি ব্যবহার করি কিন্তু শব্দটির সঠিক অর্থ জানি না। সত্যি বলতে কী - লাইব্রেরি বলতে কোন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝায় বা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ কী আমাদের অধিকাংশই তা জানি না। যার ফলে আমরা শব্দটির অপপ্রয়োগ করি। যেমন আমাদের সমাজে লাইব্রেরি বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বুঝানো হয় যারা বই ও স্টেশনারি মালামাল কেনা-বেচা করে। আবার লাইব্রেরি বলতে অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিসকক্ষও বুঝে থাকে। কেউ কেউ মনে করে কিছু বই একসাথে জমা করে রাখলেই সেটি লাইব্রেরি। অনেকে আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বই সংক্রান্ত যেকোন প্রতিষ্ঠানকেই লাইব্রেরি হিসেবে জানে। আসলে এর কোনটিই সঠিক নয়, এগুলো নিছক একটি ভুল ধারণা। লাইব্রেরি (Library) একটি ইংরেজী শব্দ বাংলায় যার আভিধানিক অর্থ হলো গ্রন্থাগার বা পাঠাগার। আর পরিভাষায়- যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‍জ্ঞানের বিভিন্ন উৎস তথা বই, অভিধান, বিশ্বকোষ, সংবাদপত্র, সাময়িকী, প্রতিবেদন, ছবি, ম্যাপ, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেবাগ্রহীতাদের জন্য পাঠ-সুবিধা, ধার, গবেষণা, রেফারেন্স, Indexing, Ab

মানব জীবন ও গ্রন্থাগার

ছবি
          মানুষ কাকে বলে বা মানুষের সংজ্ঞা কী? মাথা, ধর, একজোড়া হাত-পা, চোখ-কান, ইত্যাদি শারীরিক কাঠামো বিশিষ্ট প্রাণিকেই কী মানুষ বলে? নাকি মানুষের সংজ্ঞা আরোও ব্যাপক? একটি পশু বা পাখিকে পশু-পাখি হওয়ার জন্য কোন চেষ্টা করতে হয় না, জ্ঞানার্জনের জন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়না বা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছু নতুনভাবে শিখতে হয়না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- একটি বিড়াল ছানা (বা যেকোন প্রাণী) জন্মের পর থেকেই কীভাবে খেতে হবে, হাঁটতে হবে, বসতে হবে, ঘুমাতে হবে, চলতে হবে ইত্যাদি সবই জানে, কখনোই কোন ভুল করেনা বা নতুন করে তাকে আর কিছুই শিখতে হয়না। কিন্তু একজন মানুষকে মানুষ হতে হলে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়, অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু অর্জন করতে হয়। একটি কম্পিউটার যেমন কিছু হার্ডওয়্যার (মনিটর, সিপিইউ, কীবোর্ড, মাউস) ও সফটওয়্যার (অপারেটিং ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার) এর সমন্বয়ে গঠিত ঠিক একইভাবে মানুষও শরীর (হার্ডওয়্যার), আত্মা ও মন (সফটওয়্যার) এই তিনটির সমন্বয়ে সৃজিত একটি প্রাণী যাকে অনান্য সকল সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শরীর (হার্ডওয়্যার) ও আত্

সুনাগরিক তৈরি ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে গ্রন্থাগারের ভূমিকা

ছবি
               হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন এই বাংলাকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। যেমন উঁনি বলেছেন “আমাদেরকে সোনার দেশের সোনার মানুষ হতে হবে।”  এখন প্রশ্ন হলো সোনার বাংলা বলতে উনি কী বুঝাতেন? সোনার বাংলা মানে কি সোনা দিয়ে সব কিছু আচ্ছাদিত করা অর্থাৎ সবকিছু স্বর্ণ-খচিত করা? নাকি উঁনি রূপক অর্থে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন? ‘সোনার বাংলা’ শব্দটি একটি রূপক অর্থজ্ঞাপক শব্দ যা ইতিবাচক অর্থে (উৎকৃষ্ট বা অত্যন্ত ভালো/সোনার মতো মূল্যবান) ব্যবহার করা হয়েছে। স্বর্ণ বা সোনা যেমন আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান বস্তু তেমনি এই বাংলাও (বাংলাদেশ) আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যা আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি। তাছাড়া, সৃষ্টিকর্তা সুজলা-সুফলা, শস্যে-শ্যমলা আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিকে এতটাই মনোমুগ্ধকর রূপে তৈরি করেছেন যা আমাদের চক্ষু শীতল করে দেয়, প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা সবসময় সৌন্দর্য্যের অপরূপ এই লীলভূমিকে একটি স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতে

বাংলাদেশের উন্নয়নে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা

ছবি
ভূমিকা: গ্রন্থাগার একটি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক ও বাহক, একটি জাতির উন্নতির মাপকাঠি। একটি জাতি কত সভ্য, কত উন্নত তা তার গ্রন্থাগার পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায়। একটি জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য গ্রন্থাগার অপরিহার্য। দীর্ঘদিনের ক্রমাগত পরিশ্রম, সাধনা, অধ্যবসায় ও অনুসন্ধানের ফলে আজ উন্নত দেশগুলো দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে তার পেছনে তাদের গ্রন্থাগারগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের জনগণ গ্রন্থাগারের উপর নির্ভরশীল বিধায় তাদের সার্বিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে। গ্রন্থাগার আমাদের জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক শক্তি। শিক্ষা ও জ্ঞানের শত-সহস্র ধারার মহামিলন ঘটায় গ্রন্থাগার। গণগ্রন্থাগারকে বলা হয় জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বয়স, লিঙ্গ, পেশা কিংবা সামাজিক অবস্থানভেদে সবাইকে পাঠসেবা দেয়ার জন্য জ্ঞান ও তথ্যের ডালি সাজিয়ে সতত অপেক্ষমান এ প্রতিষ্ঠান। এজন্যই ১৯৪৯ সালে প্রচারিত UNESCO Public Library Manifesto তে গণগ্রন্থাগারকে “জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়”